আফগানিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভাবনা

সরকারের অচলাবস্থা নিয়ে নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকের পর হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে সংবাদ সম্মেলনের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য স্টিভ স্কেলাইজের সাথে কথা বলছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প :এএফপি –
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে কিছু সেনা প্রত্যাহার করা হবে কি-না এমন একটি ‘প্রক্রিয়ার বিষয় মূল্যায়ন’ করে দেখছেন উল্লেখ করে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, আমেরিকার জন্য এ ‘অন্তহীন লড়াই’-এর বিষয় পুনর্বিবেচনা করা দরকার হয়ে পড়েছে।

ফক্স নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে পেন্স বলেন, প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে অত্যন্ত স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট এখন আফগানিস্তানের ১৮ বছরের যুদ্ধের বিষয়ে বিকল্প উপায়গুলো খতিয়ে দেখছেন এবং আমাদের জন্য সর্বোত্তম উপায়টি স্থির করা দরকার। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ সাক্ষাৎকারটি ফক্স নিউজ সম্প্রচার করে।

সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ফক্স নিউজের ওয়াশিংটন সংবাদদাতা জানান, সম্ভাব্য কৌশল হিসেবে তিন হাজারের বেশি সৈন্য সরিয়ে আনা হবে এবং বাকি সেনাদের পরে প্রত্যাহার করা হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে সেখানে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যের অর্ধেক বা ৭০০০ সেনা প্রত্যাহারে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য পেন্টাগণকে নির্দেশ দেয়ার পর তার ভাইস প্রেসিডেন্ট এ মন্তব্য করলেন।

সিরিয়া থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা সম্পর্কে পেন্স বলেন, সিরিয়া বা আফগানিস্তানের রণাঙ্গন থেকে তড়িঘড়ি করে কোনো সেনা প্রত্যাহার করা হবে না। হ্যাঁ, আমরা সেনা প্রত্যাহার করব, তবে তা হবে সুশৃঙ্খলভাবে ও ধাপে ধাপে। আমি তার অসংখ্য বক্তৃতা শুনেছি যাতে তিনি সেনা ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন।
ট্রাম্প কি আফগানিস্তান থেকেও সিরিয়ার ধাচে সেনা প্রত্যাহার করবেন প্রশ্নের জবাবে পেন্স বলেন, কাবুল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয় সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। প্রেসিডেন্ট এই প্রত্যাহার প্রক্রিয়াটি খতিয়ে দেখছেন। গত আগস্টে আমাদের প্রেসিডেন্ট লড়াইয়ের নতুন কৌশল, সাজসরঞ্জাম, অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের পদক্ষেপ নেন যাতে লড়াইয়ে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যাতে তারা তালেবান, আইএস খোরাসান, আলকায়েদা বা নতুনভাবে আত্মপ্রকাশকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আফগান সরকারি বাহিনীকে সহায়তা করতে পারে।

পেন্স আফগানিস্তানের ১৮ বছরের যুদ্ধকে ‘কঠিন লড়াই’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকা ফার্স্ট, ওই অঞ্চলে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদ আবার মাথাচাড়া দিলে সে ক্ষেত্রে তা দমনের ‘সর্বোত্তম উপায়’ খুঁজে বের করার দিকে এখন নজর দিয়েছেন।

গত বুধবার ট্রাম্প আফগান লড়াইয়ে বিশেষ করে রাশিয়া, পাকিস্তান ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। ২ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ট্রাম্প প্রশ্ন করেন, কেন রাশিয়া সেখানে নেই, কেন পাকিস্তান নেই, কেন ভারত নেই। তাহলে ৬০০০ মাইল দূর থেকে কেন আমরা সেখানে থাকব?
কাতারে শান্তি আলোচনা চায় তালেবান
আলজাজিরা জানায়, প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও তালেবান কাবুল সরকারের সাথে সৌদি আরবে সরাসরি আলোচনায় বসার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ছাড়া তালেবান সৌদি আরবে এ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নির্ধারিত আলোচনায় যোগ দেবে না। তারা আলোচনার স্থান কাতারে পরিবর্তন করার দাবি জানিয়েছে।
১৮ বছরের আফগান যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে এটি হবে মার্কিন-তালেবান চতুর্থ দফা আলোচনা। বিশেষ মার্কিন দূত জালমে খালিদজাদের সাথে তালেবান নেতারা ২০১৯ সালের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে এ বৈঠকে আলোচনা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তালেবান নেতারা কাবুল সরকারের সরাসরি আলোচনা করার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। একজন সিনিয়র তালেবান নেতা বলেন, সৌদি আরব ও আরব আমিরাত চাচ্ছে যে, আমরা কাবুল সরকারের সাথে আলোচনা করি, যাতে আমরা রাজি নই। তাই আমরা আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের অম্পন্ন আলোচনা সম্পন্ন করতে সৌদিতে নয়, কাতারে বৈঠক করতে চাই।

আরেকজন তালেবান নেতা বলেন, আমরা কেন কাবুল সরকারের সাথে কথা বলবো। তারা তো বিদেশী সেনারা যাতে আফগানিস্তান ছেড়ে না যায় তার চেষ্টা করছে, আর আমরা তাদেরকে বিতাড়িত করতে বিপুল মূল্য দিয়ে চলছি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top