এবারের বিশ্বকাপে নেই গত আসরের পাঁচ অধিনায়ক

এই মুহূর্তের সব ওয়ানডে ম্যাচই মূলত ২০১৯ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে। আসন্ন বিশ্বকাপের ডামাডোলও চলছে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে। যে কারণে আগামী বিশ্বকাপের সঠিক কম্বিনেশন বেছে নিতে দলগুলো একটি ওয়ানডে সিরিজ হারতেও প্রস্তুত।

এ ছাড়াও আগের আসর বিবেচনায় এবারের বিশ্বকাপ বড় একটি পরিবর্তন দেখবে। কেননা আগেরবারের অনেক তারকা এবারের বিশ্বকাপে থাকছেন না।
পূর্ববর্তী আসরে নিজ নিজ দলের নেতৃত্ব দিলেও এবার থাকছেন না বেশ কিছু তারকা অধিনায়ক।

২০১৫ বিশ্বকাপে দলের নেতৃত্ব দিলেও এবারের আসরে থাকছেন না এমন পাঁচ অধিনায়ক।

মাইকেল ক্লাক (অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ২০১৫ বিশ্বকাপ):
‘পাপ’ হিসেবে অধিক পরিচিত মাইকেল ক্লার্ক ছিলেন অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। তার শুরুর দিকে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়া অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়া দলের অংশও ছিলেন তিনি।

নিজের ক্যারিয়ারের শেষ দিকে অসি দলের অধিনায়ক হিসেবে রিকি পন্টিংয়ের স্থলাভিষিক্ত হন ক্লার্ক। যদিও রিকি পন্টিংয়ের ন্যায় কিংবদন্তী খেতাব পাননি তিনি। তার চেয়ে বরং অনেক বেশি রুচিসম্মত একজন অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়া দলকে পুনর্গঠিত করে ২০১৫ বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করেন।

২০১৫ রূপকথার বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের নেতৃত্ব দেন ক্লার্ক। যার মাধ্যমে রেকর্ড চতুর্থবার বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করে অসিরা। মজার বিষয় হচ্ছে ২০১৫ বিশ্বকাপ ফাইনাল ছিল ক্লার্কের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। একইভাবে সে বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব ফর্মেট থেকে অবসর নেন পাপ।

একজন অধিনায়ক হওয়া ছাড়াও তিনি ছিলেন অসাধারণ একজন ব্যাটসম্যান যিনি বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে অনেক রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন। সুতরাং ২০১৫ সালে অবসর নেয়ায় ২০১৯ বিশ্বকাপ মিস করা গত আসরের যে ক’জন অধিনায়ক আছেন তাদের একজন হচ্ছেন ক্লার্ক।

উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড (আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক ২০১৫ বিশ্বকাপ)
বিশ্ব ক্রিকেটে আয়ারল্যান্ডের অবস্থানটা খুবই সাধারণ মানের। তবে আয়ারল্যান্ড দল নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অবশ্যই গুটি কয়েক নাম নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে। নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে একজন হলেন উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড। প্রকৃতিগতভাবেই অধিনায়কত্ব ছিল তার মধ্যে বিশেষ কিছু।
বিশ্বকাপে তার অধিনায়কত্বে আয়ারল্যান্ড অসাধারন নৈপুন্য প্রদর্শন করেছে।

বিশেষ করে ২০১১ তারা ইংল্যান্ডকে পরাজিত সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। এ ছাড়া ২০১৫ বিশ্বকাপেও এর কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। তারা প্রায় নক আউট পর্বে পৌঁছে গিয়েছিল। তবে রান রেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে পিছিয়ে থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি।

তবে সাম্প্রতিক সময়টা ভাল যাচ্ছেনা আইরিশদের। দলটি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। তবে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ মিস করা কয়েকজন অধিনায়কের মধ্যে একজন পোর্টারফিল্ড।

মিসবাহ উল হক (পাকিস্তান অধিনায়ক ২০১৫ বিশ্বকাপ):
পাকিস্তানী লিজেন্ড মিসবাহ উল হক। দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে সফল টেস্ট অধিনায়ক।

২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে বিশেষ পরিচিত পাওয়া এ অধিনায়কের রয়েছে বিশেষ অর্জন। টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারানো যে গুটি কয়েক অধিনায়ক রয়েছেন মিসবাহ তাদেরই একজন। যার মাধ্যমে তার অধিনায়কত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।

তার ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারটা ছিল খানিকটা ভিন্ন ধর্মী। তবে বোর্ডের সমর্থন পাওয়ার পর ক্রিকেটের সব ফর্মেটেই অসাধারন কিছু ফল এনে দিয়েছেন মিসবাহ। দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে ভাল সাপোর্ট পেয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে মিসবাহর পাকিস্তান। অবশ্যই সেখানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের।

অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লার্কের ন্যায় বিশ্বকাপ ম্যাচ ছিল মিসবাহর শেষ ওয়ানডে। কেননা ২০১৫ বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন মিসবাহ। তবে তারপরও কয়েক বছর টেস্ট ক্রিকেট চালিয়ে গেছেন মিসবাহ এবং দলকে প্রথমবারের মত টেস্ট র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে তুলেছেন। ২০১৯ বিশ্বকাপ মিস করা এমনই একজন অধিনায়ক মিসবাহ।

ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ২০১৫ বিশ্বকাপ):
নিউজিল্যান্ডের উইকেটরক্ষ ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককালাম নিঃসন্দেহে বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ক্রিকেটার। নিউজল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়কদের মধ্যে একজন হিসেবে নিজকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ম্যাককালাম। ভিন্নধর্মী কৌশল এবং হাতের শক্তির কারণে বিশ্ব ক্রিকেটে এ যাবতকালের সবচেয়ে আগ্রাসী ব্যাটসম্যানেদের একজন হিসেবেও পরিচিত তিনি।

খুব স্বাভাবিক নিয়মে অধিনায়কত্ব পাননি তিনি। তবে সময়ের সাথে সাথে একজন অসাধারণ নেতায় পরিণত হয়েছেন তিনি এবং নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটকে নিয়ে গেছেন এক নতুন উচ্চতায়। বিশ্বকাপে দলকে ফাইনালে উঠানো নিউজিল্যান্ডের প্রথম অধিনায়কও ম্যাককালাম।

ম্যাককালামের নেতৃত্বে ২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে নিউজিল্যান্ড। তবে মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে রানার্স-আপ হয়েই সন্তস্ট থাকতে হয় ম্যাককালামদের। বিশ্বকাপ শেণে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। যে কারণেই আসন্ন বিশ্বকাপে দেখা যাবে না এ তারকাকে।

এবি ডি ভিলিয়ার্স(দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ২০১৫ বিশ্বকাপ):
ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা আগ্রাসী ব্যাটসম্যানদের একজন এবি ডি ভিলিয়ার্স ‘মি: ৩৬০ ডিগ্রি’ হিসেবে জনপ্রিয়। মোক্ষম অস্ত্র ধারালো শটের ব্যটিং দক্ষতা দিয়ে পুরো বিশ্বকে চমকে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন ডি ভিলিয়ার্স। ক্রিকেটের সব শট খেলতে সক্ষম এ তারকার অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারও ছিল বেশ রুচি সম্মত। ২০১৫ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের নেতৃত্ব দেন তিনি।

তবে তারপরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফর্মেট থেকে অবসর নেন ডি ভিলিয়ার্স।

সমগ্র বিশ্বের অনেক ভক্তকে কাঁদিয়ে তারকা এ ব্যাটসম্যান বলেন,‘ ১১৪ টেস্ট, ২২৮ ওয়ানডে এবং ৭৮টি টি-২০। সময় এসেছে অন্য কারো দায়িত্ব নেয়ার। সত্যি কথা বলতে আমি ক্লান্ত’।

ডি ভিলিয়ার্সের নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে। তবে সেখানে যৌথ আয়োজক নিউজিল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয়ে টুর্নামেন্টে থেকে বিদায় নিতে হয়। ২০১৫ বিশ্বকাপে ৬৬ বলে ১৬২ রানের(ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে) রেকর্ড গড়েন তিনি।

যেহেতু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তিনি অবসর নিয়েছেন তাই আসন্ন বিশ্বকাপে ডি ভিলিয়ার্সের নায়কোচিত ব্যটিং দেখা যাবে না।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top