গৌরীপুরে আন্ত:নগর ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের তিল ধারনের ঠাঁই নেই

সাজ্জাতুল ইসলাম সাজ্জাত, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) থেকে : ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন হয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকার রেলপথে ভানের পানির মতো ছুটছে মানুষ। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে এই মানুষগুলো চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ঈদের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও মোহনগঞ্জ-ঢাকাগামী ও ময়মনসিংহ-চট্রগ্রামগামী আন্ত:নগর ট্রেনগুলোতে ট্রেনের ভিতরে ও ছাদে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। কোথাও তিল ধারনের ঠাঁই নেই। এদিকে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ময়মনসিংহের গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ট্রেন যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে।

রোববার সকাল ১০টার দিকে গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী শতশত যাত্রী আন্ত:নগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে। ওই ট্রেনটি সাঠিক সময় সকাল ১০টা ১০মিনিটে গৌরীপুর স্টেশন ত্যাগ করা কথা। কিন্তু অবশেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গৌরীপুর স্টেশনে প্রবেশ করে। এই বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে ট্রেনে দায়িত্বর কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, বারবার ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে তাই ট্রেনের ধীরগতি অন্যদিকে যাত্রীদের প্রচন্ড চাপ। ট্রেনের ইঞ্জিন সমস্যার কারণে গৌরীপুর স্টেশনে এসেও ট্রেনটি ২০ মিনিট বিলম্ব করে। এসময় দেখা যায় ট্রেনের ভেতর, ছাদে সব জায়গায় মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। দেখা গেছে, একজন অপরজনকে টেনে তুলেছেন ট্রেনের ছাদে। স্টেশনে ভিড়ের মধ্যে ট্রেনে ভিতর ও ছাদে উঠতে না পেরে অনেকেই হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আর যারা ভিড় ঠেলে ট্রেনে উঠতে পেরেছেন তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়েছেন। অনেকে নারী পুরুষ ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করে সুযোগ না পেয়ে জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে ছাদে উঠছেন। এদিকে হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি ময়মনসিংহ স্টেশনে প্রবেশের আগেই আউটার সিগনালের কাছে আসতেই পুনরায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এসময় প্রচন্ড রোদে ট্রেনের ভিতর ও ছাদের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। পরে ইঞ্জিন মেরামত করে বিলম্বে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দ্যেশে ছেড়ে যায়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা য়ায়, মোহনগঞ্জ-ঢাকা রেলপথে প্রতিদিন গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশন হয়ে হাওড় এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে দুইটি আন্ত:নগর ট্রেন, মহুয়া কমিউটার ট্রেন এবং জারিয়া-ঢাকা রেলপথে বলাকা কমিউটার ট্রেন ও ময়মনসিংহ-চট্রগ্রাম রেলপথে বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিয়মিত যাতায়েত করছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ-ভৈরব, মোহনগঞ্জ ও জারিয়া রেলপথে কয়েকটি লোকাল ট্রেন চলাচল করছে। প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীদের ভিড় লক্ষনীয়।

ওই ট্রেনগুলো গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনে যাত্রা বিরতি দেয়ার কারণে দলে দলে মানুষ ট্রেনে উঠার প্রতিযোগিতা করতে দেখা যায়। ট্রেনে হুড়োহুড়ি করে উঠতে গিয়ে অনেক সময় যাত্রীদের মাঝে হাতাহাতি ও বাগবিতন্ডার ঘটনা ঘটছে। গত শনিবার (১৭ আগস্ট/১৯) আন্ত:নগর হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রী উঠাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন যাত্রী আহত হন। অপরদিকে শনিবার রাতে ছেড়ে যাওয়া আন্ত:নগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনেও যাত্রী উঠাকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও টিকেট কালোবাজারীদের দখলে। দ্বি-গুন, তিনগুন দিয়ে নিতে হচ্ছে ট্রেনের টিকেট। এক টিকেট কালোবাজারীকে আটক করে মুছলেখা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

এদিকে শুক্রবার রাতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া আন্ত:নগর বিজয় এক্সপ্রেস অনুরূপ ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্দ যাত্রীদের হাতে নৌবাহিনীর কাপ্তাইয়ে কর্মরত নাবিক (সাদা পোশাকে থাকা) তাহমিদ আহমেদ লাঞ্চিত হন। এ সময় তার মুঠোফোন চুরির ঘটনা ঘটে বলে তিনি অভিযোগ করেন। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ট্রেনের ‘ট’ নং বগির ভিতর দিক থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। যাত্রীরা টিকেট নিয়ে উঠার জন্য ডাকচিৎকার ও অনুরোধ করলেও দরজা খোলা হয়নি। এক পর্যায়ে যাত্রীরা জানাযা দিয়ে উঠার চেষ্টা চালায়। এতেও ব্যর্থ হওয়ায় ট্রেনের স্টুয়ার্ডম্যান, কর্তব্যরত আনসারদের অনুরোধেও দরজা খোলা হয়নি। এ নিয়ে সেনাবাহিনীর সৈনিক ও নৌ বাহিনীর ছুটিতে আসা নাবিকদের দস্তাদসিস্ত শুরু হয়। এ ঘটনায় গৌরীপুর রেলওয়ে ফাঁড়িতে নৌবাহিনীর নাবিক টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ীর রইছ উল করিমের পুত্র তাহমিদ আহমেদ লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ওই বগিতে ছুটিতে আসা পোশাকবিহীন নৌবাহিনীর ৫জন নাবিক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫জন সৈনিক ছিলো। যাত্রীদের উঠতে তিনি বাঁধা দেননি। ভিতর দিক থেকে কে লক করে দিয়েছিলো তিনি তা জানেন না। এ নিয়েই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গৌরীপুর রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ কার্ত্তিক চন্দ্র রায় ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

Share this post

scroll to top