গৌরীপুরে মাল্টা চাষে সাফল্য : আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

সাজ্জাতুল ইসলাম সাজ্জাত, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) থেকে : ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ একটি রসালো ফল হচ্ছে মাল্টা। এই ফলটি এক সময় বাংলাদেশর পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ হলেও এখন আর পাহাড়ে সীমাবদ্ধ নেই। দেশের সমতল ভ‚মিতেও মাল্টার চাষ করে ইতিমধ্যে সফলতা পেতে শুরু করেছেন কৃষকরা। তেমনি রাসায়নিক সার ও কীটনাশকবিহীন মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সাতুতী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হাজী মো: আবুল মুনসুর আহম্মেদ। যা এলাকাবাসীকে উৎসাহিত করছে। মাল্টা চাষের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় কৃষকদের মাঝেও।

আবুল মুনসুর আহম্মেদের এই মাল্টা চাষের সফলতা দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। প্রতিদিন মাল্টা বাগান দেখতে আসা লোকজন তার কাছ থেকে চারা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তাই স্থানীয় লোকজনকে মাল্টা চাষে উৎসাহিত করতে ও তাদের চাহিদা মেটাতে প্রথম পর্যায়ে এক হাজার মাল্টার চারা তৈরীর পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।

আবুল মুনসুর আহম্মেদ চাকুরি জীবনে সফলতার কারণে তিনি কৃষি বিভাগ থেকে অসংখ্য সম্মাননা সহ জাতীয় পুরষ্কারেও ভূষিত হয়েছেন। চাকুরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন মাল্টা বাগান করবেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালের জুন মাসে তিনি ৯০টি বারি-১ জাতের (মিষ্টি জাতের) মাল্টার চারা সংগ্রহ করেন। পরে এক বিঘা সমতল ভ‚মিতে তিনি তা রোপন করেন। রোপনের এক বছরের মধ্যেই অর্ধেক চারাগুলোয় ফলন ধরে। বর্তমানে দুই বছরের মাথায় এসে সবগুলো গাছেই আশানুরূপ মাল্টার ফলন হয়েছে। বর্তমানে আবুল মুনসুরের বাগানে প্রতি গাছে থোকায় থোকায় মাল্টা ঝুলে আছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এসব গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হবে।

গৌরীপুরে মাল্টা চাষ

আবুল মুনসুর আহম্মেদ জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে মাল্টার বাগান করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার বাগানে প্রতিটি গাছে গড়ে ৫০-৬০টি মাল্টা ধরেছে। আগামী মৌসুমে দ্বিগুন ফলন হবে বলে আশাবাদী তিনি। তিনি আরো বলেন, মাল্টা গাছ দীর্ঘ বছর ধরে ফল দিয়ে থাকে। প্রতি মৌসুমে পর্যায়ক্রমে মাল্টা গাছে ফলন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এজন্য সঠিকভাবে গাছের পরিচর্চা ও যতœ নিতে হয়। মাল্টা বাগানে মাল্টা চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ করা যায়। সাথী ফসল হিসেবে তিনি মাল্টা বাগানে মূলা, বেগুন, পেঁপে ও মিষ্টি কুমড়া, ঢেড়ঁস,সহ বিভিন্ন শাকসবজি¦ আবাদ করেও অর্থ উপার্জন করেছেন।

এ বøকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুখ রঞ্জন দাস জানান, মাল্টা গাছ রোপনের এক বছরের মাথায় ফল পাওয়া যায়। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে চারা রোপন করতে হয়। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ১শ গাছ লাগানো যায়। ১ ফুট বাই ১ ফুট গর্ত করে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে ১০ দিন ফেলে রেখে গাছ রোপন করতে হয়। প্রথম মৌসুমে ফলন একটু কম হয়। ৫ বছর বয়সী প্রতিটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৩শ থেকে ৪শ’টি মাল্টা পাওয়া যায়। মাল্টা গাছে মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে এবং অক্টোবর-নভেম্বরে ফল সংগ্রহ করা হয়।

ইতিমধ্যে আবুল মনসুরের মাল্টা বাগান পরিদর্শন করেছেন গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম। পরিদর্শনকালে তিনি আবুল মুনসুরের মাল্টা বাগান দেখে খুব মুগ্ধ ও খুশি হয়েছেন। তার উদ্যোগ স্থানীয় কৃষকদের মাঝে মাল্টা চাষের উৎসাহ সৃষ্টি হবে।

গৌরীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার বলেন, মাল্টা একটি অর্থকরী ফসল। এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল। এতে এটি চাষে এলাকার পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাষীরা আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হবেন। তবে এ বাগান করতে হলে কৃষককে খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে কোন রকমে ভাইরাস লাগতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভাইরাস লাগলে গাছের পাতা পোকায় নষ্ট করে দেয় এবং পাতা কুঁকড়ে-মুকড়ে যায়। তিনি আরো বলেন, আবুল মুনসুরের মাল্টা বাগান সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। যা স্থানীয় কৃষকদের মাঝে প্রেরণা জোগাবে।

Share this post

scroll to top