চীনা পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের, প্রতিশোধের হুমকি বেইজিংয়ের

যুক্তরাষ্ট্রে রফতানিকৃত প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের শুল্ক বৃদ্ধি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাছ, হাতব্যাগ, পোশাক, জুতাসহ এ পণ্যগুলোর শুল্ক ১০ থেকে বেড়ে ২৫ শতাংশ হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এর জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন। ফলে এতে করে বিশ্ব অর্থনীতি বড় এক ধাক্কা খেতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

২০১৮ সালের ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন। পাল্টা উত্তর দেয়ার হুমকি আসে বেইজিংয়ের তরফেও। চীনের অভিযোগ, ট্রাম্পের নেয়া পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মাবলীর লঙ্ঘন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে। এরপর চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য কোনোরকম শুল্ক আরোপ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প ও শি জিনপিং।

এবার আবারো শুল্ক আরোপের ঘোষণা এলো যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও তাদের ওয়েবসাইটে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। চীন জানায়, তারা এই সিদ্ধান্তে ‘গভীরভাবে হতাশ’ এবং পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো যখন দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা একটি চুক্তির জন্য ওয়াশিংটনে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছিল বিগত কয়েক মাসে বিরোধের অবসানের কাছাকাছি পৌঁছেছিল দেশ দু’টি।

দেশ দু’টির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে যেমন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে তেমনি বিশ্ব অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব কেমন তা কিছুটা এড়িয়ে গেছেন ট্রাম্প। তবে কিছু মার্কিন প্রতিষ্ঠান ও ক্রেতাদের জন্য শুল্ক বাড়ানোটা একটা ধাক্কার মতো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এশিয়ান ট্রেড সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ডেবোরাহ এলমস বলছেন, ‘এটা অর্থনীতিতে একটা বড় ধাক্কা দিতে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘সব মার্কিন প্রতিষ্ঠানের হঠাৎ করে ২৫ শতাংশ খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।’

তবে কেউ কেউ মনে করছেন চীন এখনো আলোচনার চেষ্টা করবে। কারণ বাণিজ্য যুদ্ধ থামানো খুবই জরুরি। পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের গ্যারি হাফবাউর বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধ চীনের অর্থনীতি ও বাণিজ্যক্ষেত্রের জন্য ক্ষতিকর হবে। এছাড়া বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও এর ফল খারাপ হবে। তাই চীনের উচিত হবে ক্ষুব্ধ না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় সমাধান করা।’

চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে কঠিন শুল্ক কার্যকর করার প্রায় ৯০ মিনিট আগে হোয়াইট হাউজ জানায়, শুক্রবার চীনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য আলোচনা অব্যাহত থাকবে। হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা প্রতিনিধির সাথে বৈঠকের পর মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটজার ও অর্থমন্ত্রী স্টিভান মুচিনের সাথে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈঠক করেন। উভয় পক্ষ ইউএসটিআরে শুক্রবার সকালে আলোচনা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, লাইটজার ও মুচিন চীনের উপ প্রধানমন্ত্রী লিউ হি’র সাথে নৈশভোজ ও আলোচনা করেন। হি চীনা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিফেন মনুচিন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটজারের সাথে বৈঠক করেছে। পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের কাছ থেকে একটি ‘সুন্দর চিঠি’ পেয়েছেন। সম্ভবত শিগগিরই তারা কথা বলবেন।

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে চীনকে দোষ দেন রবার্ট লাইটজার। তবে বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে এখনো একটি চুক্তিতে যাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। লাইটজার বলেন, চীন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করেনি বলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সাংবাদিকদের সাথে এক বৈঠকে লাইটজার নতুন শুল্ক আরোপের পেছনে চীনের দায় রয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে বলেন, ‘গত সপ্তাহে আলোচনায় আমরা দেখেছি, চীন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, যা অগ্রহণযোগ্য বলে আমরা মনে করি।’

তিনি অভিযোগ করেন, প্রায় চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া বাণিজ্য চুক্তির খসড়ায় চীন উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছে। গত সপ্তাহে চীন চুক্তির একটি খসড়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেয়। সেখানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদামতো যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চীন, তা খর্ব করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের তাপে বিশ্ব পুঁজিবাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিন বিশ্বের বেশির ভাগ শেয়ারবাজারেই দরপতন হয়।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top