ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সার্চ কমিটি

বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ছাত্রদলের কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্চ কমিটি। দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে গঠন হওয়া ছাত্রদল কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করে দ্রুত নতুন কমিটি গঠন করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় সাবেক ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমান স্কাইপিতে কথাও বলেছেন। এরপর ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একাধিকবার বৈঠক করেছে সার্চ কমিটি। সাবেক ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে গঠিত ও ছাত্রদলের কমিটি প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্চ কমিটি সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি বৈঠক করে। তবে ওই বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক সাবেক ছাত্রনেতা।

ছাত্রদলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, রাজপথে বিএনপির আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছাত্রদলের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হয়েছে ২০১৪ সালের অক্টোবরে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পর পর নতুন কমিটি হওয়ার কথা ছিল। সূত্রটি জানায়, দীর্ঘ সময় ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন না হওয়ায় কমিটির ৬০ ভাগ নেতার ছাত্রত্ব নেই। এমনকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রদলের দীর্ঘ সময় ধরে নতুন কোনো কমিটি করা হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কমিটির ৮০ ভাগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এখন আর নিয়মিত ছাত্র নন। ছাত্রদলকে এর নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হয়েছে ডাকসু নির্বাচনে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলের আগামী কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি রাজিব আহসানের মাধ্যমে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক সাবেক নেতা  বলেন, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের বেশির ভাগের বয়স ৪০-এর ওপরে ও বিবাহিত। বিএনপির রাজপথে আন্দোলনে ছাত্রদল তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে না পারার এটাও একটি কারণ। এজন্য আগামী কমিটির নেতৃত্ব ৩০ বছরের বেশি বয়সী কারো হাতে দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) গতিশীল ও আন্দোলনমুখী করার জন্য অনেক দিন ধরে দলের মধ্যে দাবি উঠে আসছে। ওই দাবির কারণে দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকেরা কাজ করছেন। আমরা আশা করছি, এবার কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি সুন্দর ও শক্তিশালী কমিটি পাবে ছাত্রদল। যারা দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্বার, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও নতুন কমিটির সভাপতি পদপ্রত্যাশী ইখতিয়ার কবির  বলেন, আমরা ছাত্রদলের ধারাবাহিক কমিটি চাই। আপনারা জানেন, কমিটি দেয়ার সময় আসলেই বয়স ও বিবাহিত-অবিবাহিত বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। দলের সিনিয়র নেতারা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যদি নিয়মিত কমিটি গঠন করতেন তবে এ সমস্যা হতো না।

তিনি বলেন, ছাত্রদলের বর্তমান যে বয়সের সমস্যা এটা তৈরি হয়েছে, সময়মতো কমিটি গঠিত না হওয়ায়। লক্ষ্য করে দেখতে পাবেন ১৯৯৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৩ বছর এ্যানি ভাই থেকে হেলাল ভাই ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছিলেন। তারা সবাই ছিলেন সমসাময়িক। এরপর টুকু ভাই থেকে হাবিব ভাই পর্যন্ত সব কমিটি নির্দিষ্ট মেয়াদের বেশি সময় ছিল। আর বর্তমান কমিটি সাড়ে চার বছর ধরে চলছে।

ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আরেক সহ-সভাপতি ও নতুন কমিটির সভাপতি পদপ্রত্যাশী মামুন বিল্লাহ  বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা সরকার দলে নয়, বিরোধী দলে। তাই আমাদের ভেবে চিন্তে কমিটি দিতে হবে। তিনি বলেন, কোনো সিন্ডিকেট বা বয়সসীমা বেঁধে কমিটি দেয়া ভালো হবে বলে আমি মনে করি না। আমি চাই এবারের কমিটি একটা কাউন্সিলের মাধ্যমে করা হোক। তাহলে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব তৈরি হবে, যারা নেতৃত্বে আসবেন তারা ভোটারদের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবেন।

ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আরেক সহ-সভাপতি ও নতুন কমিটির সভাপতি পদপ্রত্যাশী আজমল হোসেন পাইলট   বলেন, অতীতে যেভাবে কমিটি হয়ে আসছে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে একটা কমিটি আসুক এটাই আমাদের চাওয়া। সেক্ষেত্রে আহ্বায়ক কমিটি করা হলেও সেটাকে ধারাবাহিক করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে ছাত্রদলের বেশির ভাগ নেতাকর্মীর দাবি ধারাবাহিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তিনি বলেন, ছাত্রদলের সকল নেতাকর্মী চায় আমরা যেহেতু বিরোধী দল এবং ম্যাডাম এখন কারাগারে আছেন, তাই আন্দোলন সংগ্রামের জন্য পরিপক্ক নেতৃত্ব যেন আসে এমন একটি কমিটি।

ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজিব আহসান  বলেন, ছাত্রদলের কমিটি গঠনের ব্যাপারে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা একটি প্রস্তাবনা ঠিক করে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও নীতিনির্ধারকদের কাছে দিবেন। সেখান থেকে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণে সবচেয়ে ভালো যে পন্থা সেটাই দল বেছে নেবে।

ছাত্রদলের কমিটি কবে নাগাদ হতে পারে এবং কোন ফরম্যাটে হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি ও বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি কমিটি দেয়ার জন্য। তবে বাস্তবিক পক্ষে কিছু জটিলতা আছে। তিনি বলেন, অনেক দিন হয়েছে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমরা আন্দোলন সংগ্রাম ইত্যাদি কারণে কমিটি সঠিক সময় করতে পারিনি, এটা হলো বাস্তবতা। এখন একটু জটিলতা বেশি। তবে সমাধানের চেষ্টা করছি।

সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে, আমরা পার্টির হাইকমান্ডকে সকল বিষয় অবহিত করছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এবারের ছাত্রদল কমিটি ধারাবাহিক হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এ্যানি বলেন, কমিটি ধারাবাহিকই হবে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান থেকে যেভাবে কমিটি হয়ে আসছে সেভাবেই হবে।

ছাত্রদলের নতুন কমিটি কোন ফরম্যাটে হতে পারে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু   বলেন, আসলে প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি দেয়ার ব্যাপারে কথা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান ছাত্র নেতৃবৃন্দ মনে করছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হলে তাদের জন্য একটু সুবিধা হয়। এখন আমরা সব বিষয়ই পরীক্ষা করে দেখছি কোনটা করলে ভালো হয়। কবে নাগাদ কমিটি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, এখন এটা ঠিক বলার মতো সময় আসেনি। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি দেয়ার চেষ্টা করছি।

ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে কেমন নেতৃত্ব আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, প্রকৃত অর্থে যারা ছাত্র ও যাদের দেখলে অন্য ছাত্ররা আকৃষ্ট হবে, আসলে তাদেরই ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসা উচিৎ। তিনি বলেন, বয়স কাছাকাছি হওয়া ও বয়সের ব্যবধান এ দুটিই সম্পর্ককে কাছেও আনে আবার দূরেও নেয়। সেদিক থেকে প্রকৃত ছাত্র ও কম বয়সীদের দিয়ে দায়িত্বশীল পদগুলো পূরণ করা উচিৎ।

ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির অনেকে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি চাচ্ছেন, এ বিষয়ে আপনার মত কি? এমন প্রশ্নের জবাবে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এ বিষয়ে আমি শতভাগ একমত। আমি চাই ছাত্রদলের প্রতিটি ইউনিটে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করা হোক।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top