তরুণ জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার

তরুণ জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার হচ্ছে। এমনকি অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার হয়ে স্কুল বাদ দেয়ারও ঘটনা ঘটছে।

ইউনিসেফ এবং শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বিষয়ক জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি (এসআরএসজি) কর্তৃক আজ বুধবার প্রকাশিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে।

আর এজন্য শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে সাইবার উৎপীড়ন ও ভীতি প্রদর্শন থেকে সুরক্ষিত রাখতে নীতিমালার বাস্তবায়ন করার পরামর্শ দেয়া হয় ইউনিসেফ ও সহযোগীর পক্ষ থেকে। এর পাশপাশি শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করতে জাতীয় হেল্পলাইন প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামে সুসজ্জিত করার কথা বলা হয়।

রিপোর্টে আরো বলা হয়, ৩০টি দেশে প্রতি তিনজন তরুণ-তরুণীর একজন বলেছেন, তারা অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার এবং প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন সাইবার উৎপীড়নের কারণে স্কুল বাদ দেয়ার কথা জানিয়েছেন।

যুব সমাজের সম্পৃক্ততায় ‘ইউ-রিপোর্টে’র মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে এই জরিপে অংশ নেন। এদের তিন-চতুর্থাংশ আরো বলেছেন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ও টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অনলাইন উৎপীড়নের সবচেয়ে পরিচিত স্থান।

এব্যাপারে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, ‘সংযুক্ত শ্রেণিকক্ষের অর্থ হচ্ছে একজন শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই স্কুলের কার্যক্রম শেষ হয় না এবং দুর্ভাগ্যবশত, স্কুলপ্রাঙ্গণে উৎপীড়নও শেষ হয় না। তরুণ সম্প্রদায়ের শিক্ষার অভিজ্ঞতা উন্নত করার অর্থ হচ্ছে তারা অনলাইন এবং অফলাইনে যে পরিবেশের মুখোমুখি হয় তা বিবেচনায় নেয়া।’

জরিপের অংশ হিসেবে ক্ষুদ্রবার্তা এবং তাৎক্ষণিক বার্তাপ্রেরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের কাছে তাদের অনলাইনে উৎপীড়ন ও সহিংসতা (যা অনলাইনে প্রায়শই ঘটে থাকে) বিষয়ক অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় এবং এটা বন্ধ করার দায়িত্ব কার বলে তারা মনে করেন, সেটাও জানতে চাওয়া হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩২ শতাংশ জানান, অনলাইনে উৎপীড়ন বন্ধে সরকারকেই দায়িত্ব নেয়া উচিত বলে তারা মনে করেন। এছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩১ শতাংশ এক্ষেত্রে তরুণ সমাজের এবং ২৯ শতাংশ ইন্টারনেট কোম্পানির দায়িত্বের কথা উল্লেখ করেন।

শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বিষয়ক জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি (এসআরএসজি) নাজাত মাল্লা মজিদ বলেন, ‘তাদের মতামত থেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যে বার্তাটি আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি তা হচ্ছে, যখন জানতে চাওয়া হয় যে সাইবার উৎপীড়ন বন্ধের দায়িত্ব কার হওয়া উচিত, তখন তারা প্রায় সমানভাবে সরকার, ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী (বেসরকারি খাত) ও তরণ জনগোষ্ঠীর কথা বলেছে। এখানে আমরা সবাই একত্রে আছি এবং অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই দায়িত্বটি ভাগ করে নিতে হবে।’

১৩-২৪ বছর বয়সী ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি ইউ-রিপোর্টার এই জরিপে অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে আছেন আলবেনিয়া, বাংলাদেশ, বেলিজ, বলিভিয়া, ব্রাজিল, বুর্কিনা ফাসো, আইভরি কোস্ট, ইকুয়েডর, ফ্রান্স, গাম্বিয়া, ঘানা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, জ্যামাইকা, কসোভো, লাইবেরিয়া, মালাবি, মালয়েশিয়া, মালি, মোলদোভা, মন্টিনিগ্রো, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, রোমানিয়া, সিয়েরা লিওন, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ের তরুণরাও।

ইউ-রিপোর্ট জরিপের মাধ্যমে গত ৩০ জুনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪৫ শতাংশ ইউ-রিপোর্টার জানিয়েছে যে, তারা অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে দেশজুড়ে ১২ লাখ শিশু-কিশোরের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অনলাইনে শিশুর সুরক্ষা প্রকল্প জোরদারে গ্রামীণফোন, টেলিনর গ্রুপ এবং ইউনিসেফ একটি যৌথ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

২০১৮ সালে, এই প্রকল্প দেশব্যাপী ৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী এবং ৭০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক, বাবা-মা ও অভিভাবকের জন্য সচেতনামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। নিরাপত্তা পদক্ষেপকে ঘিরে আরো ভালো জ্ঞান, সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা গড়ে তুলতে এই প্রকল্প চালু করা হয়। ইতিবাচক ডিজিটাল শিক্ষার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

Share this post

scroll to top