নতুন নিয়মে পরীক্ষা দিতে পেরে ভর্তিচ্ছুরা সন্তুষ্ট: ঢাবি ভিসি

নতুন নিয়মে পরীক্ষা দিতে পেরে ভর্তিচ্ছুরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। আজ শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত গ-ইউনিটের অধীনে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের দুটি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের কাছে এই দাবি করেন ভিসি। যদিও সময় সংকীর্ণতায় লিখিত অংশের জন্য পরীক্ষা ভালো হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অনেক শিক্ষার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে নতুন নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বহু নির্বাচনী প্রশ্নের (এমসিকিউ) পাশাপাশি দিতে হয়েছে লিখিত পরীক্ষাও। এত দিন শুধু এমসিকিউয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হতো।

শুক্রবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে ৫৪টি কেন্দ্রে এবং লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের একটি ও বুয়েট ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের একটি কেন্দ্রসহ মোট ৫৬টি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষা চলে।

সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের দুটি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি। এসময় কেন্দ্র দুটির কয়েকজন পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরিদর্শন শেষে ভিসি জানান, নতুন নিয়মে পরীক্ষা দিতে পেরে পরীক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশে ভিসি বলেন, এ বছর মোট ৫৬টি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা চলছে। আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং শিক্ষকরা পরিদর্শন করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত কিছু ঘটেনি। এবার নতুন নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পরীক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এসময় প্রশ্নফাঁসকারী ও জালিয়াতি চক্রের ফাঁদে পা না দিতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান ভিসি।

তবে এবারের ভর্তি পরীক্ষা সহজ হয়েছে বলে জানিয়েছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা জানান, ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সহজ হলেও সময়ের জন্য অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা লিখিত অংশ লিখতে পারেনি। লিখিত অংশ বর্ণনামূলক হওয়ায় নানা জটিলতায় পড়তে হয়েছে তাদের। তবে, প্রশ্নপত্র নিয়ে তেমন আপত্তি নেই শিক্ষার্থীদের।

এ বিষয়ে কুমিল্লা থেকে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নূর হোসেন বলেন, প্রশ্নপত্র সহজ হয়েছে। সময়ের জন্য লিখিত অংশ অনেকে লিখতে পারেনি। তবে আমি আশাবাদী।

বিক্রমপুর থেকে আসা শিক্ষার্থী হাফিজ বলেন, পরীক্ষা মোটামুটি ইজি হয়েছে। রিটেন সাইড একটু হার্ড হয়েছে। এখানে এক কথায় কিছু প্রশ্ন এসেছে এবং কিছু বর্ণনামূলক প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র সহজ হয়েছে কিন্তু টাইম ম্যানেজমেন্টে সমস্যা হয়েছে।

জুরাইন থেকে আসা শিক্ষার্থী ফাতেমা ইসলাম বলের, প্রশ্ন মোটামুটি হয়েছে। সহজও না কঠিনও না। তবে এমসিকিউ সহজ হলেও রিটেন একটু কঠিন হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে অনেকে রিটার্ন লিখতে পারিনি। আমাদের যদি আরেকটু সময় বাডড়য়ে দিত তাহলে লিখতে পারতাম। বর্ণ মূলক প্রশ্ন লিখতে একটু সময় লাগে। তাই এমন হয়েছে।

এর আগে ঢাবি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে নতুন নিয়মে ৬০ নম্বরের এমসিকিউ ও ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করা হবে। এমসিকিউ ৪০ মিনিট এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য ৫০ মিনিট সময় বরাদ্ধ। সংক্ষিপ্ত আকারের লিখিত প্রশ্ন উত্তরপত্রের মধ্যেই থাকবে এবং সেখানেই উত্তর দিতে হবে। দুই অংশ মিলিয়ে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষার ফল এবং এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের ফলকে ১০০ নম্বর হিসাব করে মোট ২০০ নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে।

এ বছর গ-ইউনিটে এক হাজার ২৫০টি আসনের বিপরীতে আবেদনকারীর ২৯ হাজার ৫৮ জন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন বা টেলিযোগাযোগ করা যায় এরূপ কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস/যন্ত্র বহন করতে দেওয়া হয়নি।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া, পরীক্ষা চলাকালে ভ্রাম্যমান আদালত দায়িত্ব পালন করবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীদের জেলা সংগঠন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের তথ্য সহায়তা দিয়েছে। এছাড়া, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বিশ্রামের জন্য চেয়ার ও খাবার পানির ব্যবস্থা করেছে।

সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হওয়ায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কাদায় সয়লাব হয়ে গেছে।

ঢাবির চ-ইউনিটে আসন প্রতি লড়বে ১১৮ জন: এদিকে, চারুকলা অনুষদভুক্ত চ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা (সাধারণ জ্ঞান) শনিবার সকাল ১০টায় শুর হবে। চলবে ১১টা পর্যন্ত।

জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদসহ ক্যাম্পাসের মোট ১৯টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। চ-ইউনিটে ১৩৫টি আসনের বিপরীতে ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর সংখ্যা ১৬ হাজার এক জন। এবারের চ-ইউনিটে আসন প্রতি লড়বে ১১৮ জন শিক্ষার্থী। ভর্তি পরীক্ষার সিট-প্ল্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের admission.eis.du.ac.bd ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে।

বরাবরের মতোই কম আসনের এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। মোট আসনের বিপরীতের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিচারে এই ইউনিটেই সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হয়।

এছাড়া, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ক-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২০ সেপ্টেম্বর, কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২১ সেপ্টেম্বর, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২৭ সেপ্টেম্বর, চারুকলা অনুষদভুক্ত ‘চ’ ইউনিটের সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষা ১৪ সেপ্টেম্বর ও অঙ্কন পরীক্ষা ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

Share this post

scroll to top