বন্ধুকে পিঠে নিয়ে ছয় বছর : ভাইরাল চীনের ১২ বছরের কিশোর

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের মেইশান শহরের হেবাজি শহরের টাউন সেন্ট্রাল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শু বিঙ্গইয়্যাং। সম্প্রতি কিছু ছবি ও ভিডিওতে ভাইরাল হয়ে যায় বারো বছর বয়সী এই শু।

সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওইসব ভিডিও এবং ছবিতে দেখা গেছে, সাদা ফুল হাতা শার্ট, লাল টাই, গাঢ় নীল ফুল প্যান্ট পড়া এবং ছোট ছোট করে চুল ছাঁটা শু তার স্কুলের মাঠে ঘুরছে, সিঁড়ি বেয় উঠছে, ক্লাসে যাচ্ছে। আর এ পুরোটা সময় জুড়েই তার পিঠে বসে আছে তারই বয়সী আরেকটি ছেলে। কালো জ্যাকেট পরা ঝাং জি।

ভাইরাল হয়ে পড়া দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের ওইসব ভিডিও এবং ছবিতে এখন প্রশংসার বন্যা বইছে। চীনের সিনহুয়া এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, দুই জনই হেবাজি টাউন সেন্ট্রাল প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র। সাদা শার্টের শু বিঙ্গইয়্যাংয়ের পিঠে চড়েই গত ছয় বছর ধরে স্কুল করছে তার বন্ধু ঝাং জি। একদিনের জন্য ঝাংকে রেখে একা কোনো ক্লাসে যায় না না শু।

সিনহুয়ার প্রতিবেদনটি দেখে মুখের ভাষা হারিয়েছেন অনেকেই। কারণ চরম আত্মকেন্দ্রিকতার এ যুগে বছরের পর বছর ধরে শু তার বন্ধুর জন্য যা করে আসছে, তা নিজের আত্মীয়ের জন্যও অনেকেই এখন করে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার বছর বয়সে পেশির বিরল এক রোগে আক্রান্ত হয় ঝাং। ফলে পাঁচটা শিশুর মতো হাঁটতে-চলতে পারত না সে। কিন্তু তারপরও সে স্কুলে ভর্তি হয়। প্রথম শ্রেণি থেকে শুয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব। তখন থেকে শুরু। এখন তারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। পিঠে করে ঝাংকে ক্লাসে পৌঁছানো থেকে শুরু করে তার পানির বোতল ভরে দেয়া, হোমওয়ার্কের খাতা জমা দেয়া। টিফিন খাওয়ানো। সব কিছুই করে দেয় শু।

ওই স্কুলের এক শিক্ষক জানান, প্রথম দিকে ক্লাসের সব ছেলেই ঝাংকে সাহায্য করত। কিন্তু সময় পার হওয়ার সাথে সাথে তাদের সে উৎসাহে ভাটা পড়েছে। তাদের পড়া, খেলা ইত্যাদি অন্য কাজ বেড়েছে। ফলে ঝাংকে তারা আর সময় দিতে পারত না। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিল শু।

ওই শিক্ষক আরো জানান, প্রথম দিকে শুয়ের মা-ও জানতেন না তার ছেলে প্রতিদিন স্কুলে পিঠে করে বন্ধুকে তুলে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে তার যাবতীয় কাজ করে দেয়। পরে শুয়ের বন্ধুরাই এক দিন সব জানিয়ে দেয় তার মাকে।

কেন করছে সে এ কাজ বা তার এতে কষ্ট হয় না? এ প্রশ্নের জবাবে শু যা জানিয়েছে, তার অর্থ এটা কোনো ব্যাপার হলো। শু জানায়, ঝাংয়ের চেয়ে তার ওজন অনেক বেশি। আমার ওজন তো চল্লিশ কেজির উপরে। ও মাত্র ২৫ কেজি। আমি ওর চেয়ে লম্বা। শক্তিশালীও। আমি না করলে ওকে আর কে-ই বা সাহায্য করত।

অন্যদিকে বন্ধুর প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা ঝাংয়ের। সে বলছে, শু আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু। রোজ আমি ওর সঙ্গে পড়ি, খেলি, গল্প করি। এ ভাবে সব সময় আমার পাশে থাকার জন্য ওকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top