বাংলাদেশ-মিয়ানমার বন্ধুত্বের লেখাটি মুছে ফেলা হয়েছে

ভর দুপুরে প্রচন্ড রোদে হকি অনুশীলন করছিলেন মিয়ানমারের কয়েকজন হকি খেলোয়াড়। অবশ্য হকি স্টেডিয়ামে গড়ে উঠা কয়েকটি বহুতল ভবনের ছায়া তাদের গায়ে ঠান্ডা পরশ বুলিয়ে দিচ্ছিল। তাই রোদের গরম এই স্টিকধারীদের প্রভাবিত করতে পারছিলনা। তবে ফেডারেশন কর্মকর্তাদের আপত্তি এই বিশাল বিশাল অট্টালিকা গুলোর বিষয়ে।

মিয়ানমার হকি ফেডারেশনের অফিস ম্যানেজার থেং থুয়ে’র মতে, ‘এই ভবন গুলো টার্ফ এবং হকি স্টেডিয়ামের পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে। তাই এখন অন্যত্র টার্ফ বসানো দরকার।’

পুরো মিয়ানমারে এই একটিই হকির অ্যাস্ট্রো টার্ফ। তা বাংলাদেশেরই দেয়া। বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে এই টার্ফটি দিয়েছিল মিয়ানমারকে। শুধু টার্ফের টাকাই দিয়েছে বাংলাদেশ। বেসমেন্টসহ বাকী খরচ মিয়ানমার সরকারই বহন করেছে। টার্ফের পূর্ব পার্শ্বে স্কোর বোর্ডের নীচে বড় করে লেখা ছিল বাংলাদেশ-মিয়ানমার ফ্রেন্ডশিপ হকি টার্ফ। এখন সেই লেখা আর নেই।

থেং থুয়ে অবশ্য জানালেন , ‘বৃষ্টি এবং অন্যান্য কারণে এই লেখা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে আন্তর্চাতিক ম্যাচ হলে লেখা হয় তা। আগামীতে স্থায়ীভাবে তা লেখা হবে।’ ছবির অ্যালবাম এনে এই লেখা সম্বলিত ছবি দেখালেন তিনি। যদিও অন্য সূত্র বলছে ২০১৩ সালের সী গেমস হকির সময় এই লেখা মুছে ফেলা হয়।

বাংলাদেশ সরকারের এই হকি টার্ফটি দেয়ার সময় দুই দেশের সম্পর্ক বেশ ভালোর দিকে গড়াচ্ছিল। এখন সেই দিন নেই। তাই বাংলাদেশের কাছে আরেকটি টার্ফ চাওয়ার মতো পরিস্থিতিও অনুপস্থিত। এমনই সুর থেং থুয়ের। একই সাথে হকি দলকে বাংলাদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রেও।

এই টার্ফ বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া। সেলাই করে তা ব্যবহার করতে হচ্ছে। জানান অফিস ম্যানেজার। এই টার্ফকে ঘিরেই চলছে মিয়ানমারের হকি। অন্যত্র ঘাসের মাঠে হকি চর্চা হলেও লিগ, টুর্নামেন্ট বা আন্তর্জাতিক ম্যাচে সব কিছুরই কেন্দ্রবিন্দু এই টার্ফ। উল্লেখ্য বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন এখন আর ঢাকার মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে এই সবুজ রঙের টার্ফ ব্যবহার করে না। তাদের এখন নীল টার্ফ।

মিয়ানমারের হকি বলতে সেনাবাহিনীর হকি খেলোয়াড়রাই। এর বাইরে সিভিলিয়ান দুই তিন জন আছেন। তাদের চাকুরী দিয়েছে স্পোর্টস অ্যান্ড হেলথ মন্ত্রনালয়। ১০/১২ দল নিয়ে এক মাসের লিগ মিয়ানমারের হকিতে। এছাড়া আরো পাঁচটি টুর্নামেন্টও আয়োজন করে। এছাড়া গ্রীষ্মকালে দেশেল বিভিন্ন অঞ্চলে কোচ পাঠিয়ে স্কুল থেকে হকি খেলোয়াড় বাছাই করা হয়। এদের নিয়ে এই টার্ফে আয়োজিত হয় অনূর্ধ্ব- ১০, অনূর্ধ্ব-১২ স্কুল হকি। গ্রীষ্মে স্কুল বন্ধের সময় সব ডিসিপ্লিনের খেলোয়াড় বাছাই প্রক্রিয়া চলে। এটা বার্ধতামূলক।

এখনও এশিয়ার হকির নিচু সারির দল মিয়ানমার। অবশ্য এরপরও আছে তাদের সাফল্য। ২০১৫ সালের সী গেমসে ( সাউথ ইস্ট এশিয়ান গেমস) তারা হকিতে রৌপ্য পদক জয়ী। এটাই তাদের হকির সবচেয়ে বড় অর্জন। জানালেন থেং থুয়ে। এই সাফল্যের পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক হকি খেলোয়াড়কে ১০ লাখ কিয়েত করে অর্থ পুরস্কার দেয়া হয়েছিল।
ফাইনালে তারা শক্তিশালী মালয়েশিয়ার কাছে হেরেছিল ১২-০ গোলে। গ্রুপ পর্বে তারা সিঙ্গাপুরের সাথে ২-২ গোলে ড্র করে। এরপর মালয়েশিয়ার কাছে ০-৬ গোলে হারে। এরপর সিঙ্গাপুর ১-৯ গোলে ধরাশায়ী হয় মালয়েশিয়ার কাছে। ফলে গোল পার্থক্যে মিয়ানমারের ফাইনালে যাওয়া। এছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালের গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জয়ী। এই গেমসের অন্য হকি দলগুলো হল ইন্দোনেশিযা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।

এর বাইরে ওয়ার্ল্ড হকি লিগ এবং এএ্ইচএফ কাপে প্রতিনিধিত্ব করেছে মিয়ানমার। ২০১৩ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে তারা ৩-১ গোলে জয় পেয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top