মন্ত্রীর আশ্বাসে মাদরাসা শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচী প্রত্যাহার

শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর আশ্বাসে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকরা তাদের কর্মসূচী প্রত্যাহার করেছেন। তবে, আগামী বাজেটে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণা এবং কোন বরাদ্দ না থাকলে আবারও রাজপথে কর্মসূচী দেয়ার আলটিমেটাম দিয়েছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী শিক্ষক নেতারা।

এর আগে বিকেল ৩টায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি এবং উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল-র সাথে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা হাফেজ কাজী ফয়েজুর রহমান এবং মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমানের আকস্মিক বৈঠক হয়।

বৈঠকে মন্ত্রী-উপমন্ত্রী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের দাবীর ব্যাপারে শিক্ষক নেতাদ্বয়ের কাছে জানতে চান। নেতৃদ্বয় তাদের জাতীয়করনসহ ৫ দফা দাবীর যৌক্তিকতা তুলে ধরনে এবং এ সব দাবী পূরণে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের কথাও জানান। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের আমরণ অনশন কর্মসূচী চলাকালে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীরের প্রধানমন্ত্রী পক্ষ থেকে দেয়া আশ্বাসের কথাও বর্তমান মন্ত্রী-উপমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

নতুন শিক্ষামন্ত্রী-উপমন্ত্রী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নেতৃদ্বয়কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা(মন্ত্রী-উপমন্ত্রী) নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনবেন এবং দাবীগুলো পূরনে আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখার ব্যাপারে নিজেদের ভূমিকা রাখার আশ্বাস দেন। মন্ত্রী-উপমন্ত্রী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নেতৃদ্বয়কে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে অবস্থান কর্মসূচী প্রত্যাহার করে আগামী বাজেট পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরার আহবান জানান।

মন্ত্রী-উপমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক নেতৃদ্বয় গত ৮দিন যাবৎ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রচন্ড রোদ-বৃষ্টি উপক্ষো করে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী স্থলে এসে বিষয়টি অবগত করান। এ সময় শিক্ষক নেতারা নতুন মন্ত্রী-উপমন্ত্রীর আশ্বাসে আস্থা রেখে কর্মসূচী প্রত্যাহারের ঘোষনা দেন।

এ সময় কিছু শিক্ষক এর বিরোধীতা করলে নেতারা বলেন, আমরা আগামী বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করব। বাজেটে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করনের ঘোষণা না দেয়া হলে এবং বাজেটে এ ব্যাপারে কোন বরাদ্দ না রাখা হলে আবারও তাৎক্ষনিকভাবে কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে এবং সরকারকে ঐ সময় পর্যন্ত আলটিমেটাম দেয়া হলো। এর পর কর্মসূচী প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয় এবং সারাদেশ থেকে আগত শিক্ষকদের স্ব স্ব মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুরোধ জানানো হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ১৬ দিন শিক্ষকরা অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ীর শিক্ষকরা। সে সময় শিক্ষা সচিব মোঃ আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অনশনস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষকদের দাবি পূরণে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষকরা হতাশ হয়ে গত ৮দিনের কর্মসূচী পালন করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন।

১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রে রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো সরকারের সব কাজে অংশ গ্রহণ করে ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা। অথচ মাস শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পায়।

কিন্তু ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা তেমন কোনও বেতন পান না। ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষকরা সর্বসাকুল্যে প্রধান শিক্ষক ২ হাজার ৫ শ’ টাকা সহকারি শিক্ষক ২ হাজার ৩শ’ টাকা ভাতা পান। আর বাকি প্রায় ৮ হাজার ৫শ’টি মাদ্রাসার শিক্ষকগণ গত ৩৪ বছর যাবত বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত।

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক সমিতির দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রাইমারির ন্যায় মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণ, কোড বিহীন মাদ্রাসাগুলো মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃক কোড নম্বরে অন্তর্ভূক্তকরণ, প্রাইমারির মতো প্রতিটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার অফিস সহকারী নিয়োগ, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের পিটিআই ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষণের ব্যবস্থা করা ।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top