মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টও বলছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই খালেদা জিয়া কারাবন্দি : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসা আর জেদের কারণে উপযুক্ত সুচিকিৎসার অভাবে সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন। গতকালও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক মানবাধিকার বিষয়ে রিপোর্টে বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সরকার দুর্নীতির শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে- সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত আছে। কিন্তু কার্যত সব ক্ষমতাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে।’

আজ শুক্রবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আজ আন্তর্জাতিক ভাবেও শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে বিবৃতি আসছে। সকল সাংবিধানিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে শেখ হাসিনা শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় সম্পূর্ণ নির্দোষ বেগম জিয়াকে অন্তত দুইশ বছরের প্রাচীন ও জীর্ণ কারাগারে বন্দী করে রেখেছেন, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্টেও তা প্রমাণিত হলো।

রিজভী অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার নির্দেশেই বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেয়া হয়েছে। তার জামিন নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। তাকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তার সাথে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ করতে দেয়া হচ্ছে না। বিনা চিকিৎসায় ৭৪ বছর বয়সী চার বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ছোট্ট অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ফেলে রেখে নারকীয় শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে গণশুনানি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, সাধারণ মানুষের পেটে ছুরি মারতে আবারো গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে সরকার। শুধু লুটপাটের জন্য বেআইনভাবে গ্যাসের মূল্য শতকরা ১০৩ ভাগ বৃদ্ধি করা হচ্ছে-যা বেআইনি ও মনুষত্বহীন পদক্ষেপ। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, সাধারণ গ্রাহক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, সাংবাদিকরাসহ দেশের আপামর জনসাধারণ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে তা বাতিলের দাবি জানালেও নিষ্ঠুর নির্দয় সরকার তা শুনছে না।

তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির মাশুল দিতে হবে সাধারণ মানুষকে। গ্যাসের দাম বাড়ালে কারখানার বিকাশে বাধাগ্রস্ত হবে। এতে কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, এমনিতে সারাদেশের ঘরে ঘরে বেকার সংখ্যা বেড়েছে এর ফলে ঘরে ঘরে বেকারের কারখানা তৈরি হবে। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গ্যাসের বাড়তি দাম ওঠাবে। পরিবহন ব্যবসায়ীরা বাড়াবেন ভাড়া। সব মিলিয়ে বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়। আবাসিকে একচুলা বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৩৫০ টাকা, দুই চুলা ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৪৪০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। গত ১০ বছরে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৬ বার।

বিএনপির এই নেতা বলেন, গ্যাস সঞ্চালন মূল্যহার, গ্যাস বিতরণ মূল্যহার এবং পাইকারি গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাবগুলো কয়েকটি কারণে অযৌক্তিক এবং বেআইনি। বিইআরসি আইনের ২(ঝ) উপধারা মতে এনার্জি সরবরাহ বা তৎসম্পর্কিত বিশেষ সেবার মূল্যহার এবং ৩৪ (৫) উপধারা মতে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না। যদি না জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনোরূপ পরিবর্তন ঘটে। গত বছরে ১৬ই অক্টোবর বিইআরসি এলএনজি মিশ্রিত পাইকারি গ্যাসের মূল্যহার, বিতরণ ও সঞ্চালন মূল্যহার বৃদ্ধিসহ অন্যান্য মূল্যহার বৃদ্ধি/নির্ধারণ করে গ্যাস সরবরাহ ট্যারিফ/মূল্যহার পুনঃনির্ধারণের আদেশ দেয়। তাতে গ্যাস সরবরাহ মূল্যহার ৭ টাকা ১৭ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ৩ মাসের ব্যবধানে সঞ্চালন ও বিতরণী কোম্পানিগুলো পাইকারি গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধিসহ সঞ্চালন ও বিতরণ সেবার মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। তাতে দেখা যায়, গ্যাস সরবরাহ মূল্যহার ৮ টাকা ৬৩ টাকা থেকে ১২ টাকা ১৯ পয়সা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। ৩ মাসের ব্যবধানে পাইকারি গ্যাসসহ সঞ্চালন ও বিতরণ সেবার কোনো পর্যায়ে মূল্যহার পরিবর্তনের কোনো কারণ সৃষ্টি হয়নি। তাই বিতরণ, সঞ্চালন, কিংবা পাইকারি গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবের কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।

তিনি বলেন, ভারতে এলএনজি আমদানি প্রতি ঘনমিটারে ৬ মার্কিন ডলার খরচ পড়লেও বাংলাদেশে ১০ ডলার খরচ পড়ছে। এটা কেনো? এ টাকা যাচ্ছে রাঘব বোয়ালদের পকেটে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে বেশুমার দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের অর্থ উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত আরেকটু সুশ্রাব্য ও প্রসারিত করার জন্য গণশুনানির কথা বলছে সরকার। মূলত জনগণের সাথে প্রতারণা করার এটি একটি প্রহসন মাত্র।

অবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির এ নেতা। অন্যথায় দাবি আদায়ের লক্ষে রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকিও দেন তিনি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top