যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ওষুধ পাচ্ছে না ইরান?

ইরান বলছেন চিকিৎসা সামগ্রী বিশেষ ছাড় পাওয়ার কথা থাকলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ পাচ্ছেনা তারা। যদিও ওয়াশিংটন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ইরানের জন্য আমেরিকার বিশেষ প্রতিনিধি ব্রায়ান হুক বলেছেন, “ইরানের জনগণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রী নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রেখেছে”। যদিও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলছেন, ফার্মাসিউটিক্যালসের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে কারণ ঔষধ কিনতে আর্থিক লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

কোন ধরণের ঔষধ ইরান আমদানি করে?

প্রয়োজনীয় প্রায় সব মৌলিক ঔষধই ইরান নিজে উৎপাদন করে কিন্তু যখন এডভান্সড মেডিসিনের প্রসঙ্গ আসে তখন দেশটিকে আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হয়। এক হিসেবে দেখা যায়, ইরানের প্রয়োজনীয় ঔষধের চার শতাংশ তাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তবে আমদানি করা ঔষধ ও তাদের মূল্যের ওপর কম তথ্যই পাওয়া যায়।

বিবিসির পার্সিয়ান সার্ভিস তাদের দর্শকদের কাছ থেকে ঔষধের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি জানতে পেরেছে। একজন ভুক্তভোগী বলছেন গুরুত্বপূর্ণ একটি ঔষধ পেতে যে সমস্যা হচ্ছে তার কথা।

“ঔষধটি পেতে আমাকে অন্য কয়েকটি শহরে যেতে হয়েছে যে সেখানকার ফার্মেসিগুলোতে আছে কিনা। কয়েকটিতে আছে কিন্তু দাম এতো বেশি যে আমার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে”।

বিবিসি ইরানের অভ্যন্তরে একজন ঔষধ আমদানীকারকের সাথেও কথা বলেছে। তিনি বলছেন গত দু’বছরে ঔষধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং দামও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে অচেতন করা, ক্যান্সার চিকিৎসা ও ডায়াবেটিসের ঔষধ পাওয়াটাই কঠিন হয়ে উঠেছে। এছাড়া ইরান সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে স্বাস্থ্য ও মেডিকেল সেবার খরচ বেড়েছে ১৯ শতাংশ। তবে ঔষধের এই ঘাটতি ও দাম বাড়ার পেছনে আরও অনেক কারণ থাকতে পারে।

নিষেধাজ্ঞা কিভাবে কার্যকর হচ্ছে?

ইরানের সাথে বিশ্বশক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তির পর ২০১৬ সালে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু ২০১৮ সালে আবার যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে যা কার্যকর হয় শিল্প ও ব্যাংক খাতে। তবে ঔষধের মতো মানবিক সরবরাহ এবং এসবের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো শাস্তির আওতায় থাকা উচিত নয়।

“কিন্তু সমস্যা হলো, ব্যবসা চালু রাখতে হলে একটি ব্যাংক পেতে হবে এসব বিষয়ে লেনদেনের জন্য,” বলছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ রিচার্ড নিপিয়ো। তিনি বলছেন ব্যাংক পাওয়াটাই একটা বড় সমস্যা। আবার সব ঔষধ বা মেডিকেল সেবা নিষেধাজ্ঞার বাইরে নয়।

ইউকে ফিন্যান্সের পরিচালক জাস্টিন ওয়াকার বলছেন, “মানবিক সেবার বাণিজ্য ও পেমেন্ট ইরানের সত্যিই জটিল বিষয়”।

ঔষধ যাচ্ছে ইরানে ?

ইরানের সরকারি হিসেবে গত ১৬ মাসের ঔষধ ও উপকরণ আমদানির একটি চিত্র পাওয়া গেছে। সেপ্টেম্বর ২০১৮তে আমদানি ১৭৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিলো এবং এরপরই এটি কমতে শুরু করে। চলতি বছর জুড়ে ৬০ শতাংশ কমে মাত্র ৬৭ মিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। কিন্তু সব তথ্য পাওয়া কঠিন হওয়ায়, নিশ্চিত করে বলা যায়না যে এটি নিষেধাজ্ঞার জন্যই হয়েছে। ইরানের বাণিজ্যিক অংশীদার ইইউ’র কাছ থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া যায়। গত বছর নভেম্বরে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর ইরানের কাছে ঔষধ সামগ্রীর বিক্রিও কমে যায় আগের তুলনায়।

ইরানের সাথে বাণিজ্যে ঝুঁকি

জাস্টিন ওয়াকার বলছেন, ব্রিটেনের ব্যাংকগুলোর জন্য মেডিকেল সামগ্রী ইরানে পাঠানো কঠিন তাই এখন সীমিত আকারে ব্যবসা হচ্ছে। আসলে নিষেধাজ্ঞার পর ইরানের সাথে বাণিজ্য পদ্ধতিই ঔষধ আমদানি কঠিন করে তুলেছে। এ কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ঔষধের সংকট দেখা দিয়েছে ও দাম বেড়ে যাচ্ছে ইরানের বাজারে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বিধিনিষেধ এড়িয়ে ইউরোপীয়রা সহায়তার যে পরিকল্পনা নিয়েছে তার দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান জানাচ্ছে ইরান। যদিও এটি রাজনৈতিকভাবে আসলেই কঠিন। সূত্র : বিবিসি।

Share this post

scroll to top