রাব্বানীকে মুখ আর স্বভাব সংযত রাখার জন্য পরামর্শ দিলেন ছাত্রলীগ নেত্রী শিমু

চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মের দায়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া গোলাম রাব্বানীকে মুখ আর স্বভাব সংযত রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী নুসরাত জাহান শিমু।

তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য এবং ময়মনসিংহ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও দোলন-চাঁপা হলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পদে ছিলেন।

রাব্বানী নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে নেতাকর্মীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এ পরামর্শ দিয়েছেন শিমু। গত সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে ক্ষমা চান রাব্বানী।

পোস্টে নিজের ভুলত্রুটির জন্য অনুতপ্ত বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সেই সঙ্গে তিনি স্ট্যাটাসে সংগঠনের নীতি-আদর্শ পরিপন্থী ‘গর্হিত কোন অপরাধ’ করেননি বলে দাবি করেছেন।

গোলাম রাব্বানীর ওই স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় শিমুও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে সিন্ডিকেটকে দোষারুপ করে রাব্বানীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করেন তিনি।

শোভন-রাব্বানীর কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়ার জন্য রাব্বানীকে দায়ী করেন শিমু। রাব্বানীকে তার মতো করে প্রটোকল না দেয়ায় তাকে কমিটিতে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেত্রী। শিমুকে রাব্বানীর ফেসবুক থেকে আনফ্রেন্ড করে দেয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন শিমু।

গত কমিটিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রার্থী নুসরাত জাহান শিমুর ফেসবুক পোস্টে লিখেন-
‘স্বঘোষিত মানবিক ছাত্রনেতা গোলাম রাব্বানী আপনাকে বলছি- ‘‘বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে আবেগ-ভালোবাসার এই প্রাণের সংগঠনের নীতি-আদর্শ পরিপন্থী গর্হিত কোনো অপরাধ করিনি। আনিত অভিযোগের কতটা ষড়যন্ত্রমূলক আর অতিরঞ্জিত, সময় ঠিক বলে দেবে।’’

আপনার এই বক্তব্য থেকে জাতিকে আবারও এটাই জানাতে চাইছেন যে, নেত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার অন্ধমোহে আপনি হয়তো ভুলে গেছেন যে, বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ভুল বোঝালেই তিনি ভুল বুঝবেন- এমন মানুষ তিনি নন। বিচক্ষণতার বিচারে তিনি আপোষহীন নেত্রী। কারণ তার ধমণীতে বইছে আপোষহীন নেতা বঙ্গবন্ধুর রক্ত। ভাই গোলাম রব্বানী, আপনার ও আপনাদের সব অপকর্মের তথ্য প্রমাণ নিয়েই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। ছাত্রলীগ আপা’র কতটা আবেগ আর ভালোবাসার জায়গা তা আমরা যারা ছাত্রলীগ করেছি, আপা’র দুয়ারে যাদের একবারও যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে- তারা জানি।

আপনি আরো ভালোভাবেই জানেন, যেহেতু আপনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, আপার সরাসরি স্নেহধন্য হওয়ার সৌভাগ্য আপনার হয়েছিল। সে স্থান আপনি নিজেই হারিয়েছেন নিজের কর্মদোষে। নিজেকে ‘জাহির’ করার অন্যান্য লোক দেখানো কার্যক্রমের মতো আপনার আজকের স্ট্যাটাসটাও জাস্ট সহানুভূতি নেয়ারই প্রক্রিয়া ছিল বলে মনে করছেন অনেকেই। আমিও তাদের মতামতের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি।

কথায় কথায় সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট বলে যেসব নেতাদের নিয়ে আপনি বারবার নোংরা খেলায় মেতেছেন, নানা প্রশ্ন তুলেছেন- তাদের হাত ধরেই কিন্তু আপনার ছাত্রলীগ জীবনের পথচলা, পরিচয়সহ দুবার কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।

যাদের হাত ধরে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচয় পেয়েছিলাম, স্ব-পরিশ্রমের প্রতিদান পেয়েছিলাম। দু’চারবার মমতাময়ীর সরাসরি স্নেহধন্য হওয়ার সৌভাগ্যও হয়েছিল। সে সব সিনিয়রদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।

আপনি যাদের কথিত সিন্ডিকেটের বলে দোষারোপ করছেন (ছাত্রলীগের অগ্রজদের) তাদের কাছেই জননেত্রীর ওপর ও উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার শিক্ষাই পেয়েছি বারবার।

আপনি নিজে আপনার কর্মীদের কি শিক্ষা দিয়েছিলেন বলতে পারেন? ২০১০ সালে ঢাকার বাইরে একেবারেই নতুন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসেই প্রথম দিন নবীন বরণের মিছিলে জয় বাংলা স্লোগানে গলা মিলিয়েছিলাম। সেই থেকে শুরু। বড় ভাইদের সঙ্গে বহুদিন একা একাই মিছিল করেছি।

একটা একটা করে সহযোদ্ধা তৈরি করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ছাত্রী হলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হয়েছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য হয়েছিলাম।

গত সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ক্যান্ডিডেটও হয়েছিলাম। কারণ পরিশ্রম কারোর চেয়ে কম করিনি, বরঞ্চ নানা প্রতিকূলতায় আরও বেশিই পরিশ্রম করতে হয় আমাদের। যারা ঢাকার বাইরে রাজনীতি করেন তারা অন্তত বুঝতে পারবেন আমাদের পথচলা এতোটা সহজ ছিলো না।

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের পথ তৈরি করা ছিলো না, আমাদের পথটা আমাদেরই তৈরি করতে হয়েছিল।

আপনি নেতা হওয়ার পর আপনাকে আপনার মতো করে প্রটোকল দিইনি বলে নিজের পরিশ্রম, যোগ্যতা, পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাস ও গোয়েন্দা রিপোর্ট কোনো অংশেই পিছিয়ে না থাকার পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগে স্থান পাইনি।

বরঞ্চ নিজের ফেসবুক থেকে আনফ্রেন্ড করে আপনার পোষা শিশু অনুসারীদের দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলিয়েছেন, আমি নাকি কোটায় পোস্ট পেয়েছিলাম! এসবই শিখিয়েছিলেন তো আপনার অন্ধ কর্মীদের? আপনার এই অনুসারীরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কী শেখাবে বলতে পারেন?

নিজে এমন কী মহান কাজ করেছেন যে, কথায় কথায় আপার ছাত্রলীগ বলে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করেন? আপনার অগ্রজরা কি বানের জোয়ারে ভেসে এসেছিল তাহলে? আপা তো বলেননি, আগের ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি করতে। আপা তো বলেননি, গ্রুপিং করতে। তাহলে আপনি কোন অধিকারে কমিটি করার সময় কে কার লোক তা বিচার করে অসংখ্য যোগ্য কর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের কর্মীদের নেতা বানালেন?

মনে রাখবেন, যে ধারায় পথ চলা শুরু করেছিলাম সে ধারা আজও অব্যাহত রেখেছি। যতদিন বেঁচে থাকবো এ ধারাতেই পথ চলবো ইনশাআল্লাহ। এখনও জীবনের বহুপথ পাড়ি দিতে হবে আপনাকে, নিজের মুখ আর স্বভাবকে সংযত করুন। নিজেকে মেধাবী নেতা মনে করেন, অথচ এতটুকু বোঝেন না যে আপনি কী করছেন, আর জাতি আপনাকে নিয়ে কী ভাবছে?

নতুন করে কিছু চাওয়ার নেই আসলে। মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মহান আল্লাহ তা’আলা ভালো রাখুক। জননেত্রীকে বেঁচে যেন আর কোনো ফেরিওয়ালা নিজের পকেট ভারি না করতে পারে- এটাই শেষ চাওয়া থাকবে। ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের প্রতি প্রত্যাশা- জননেত্রী বিশ্বাস করে যে আমানত আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছেন সে আমানতের সম্মান আপনারা রক্ষা করবেন। ত্যাগীদের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন এবং ঢাকার বাইরের ইউনিটগুলোর তাদের পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়ণ করবেন।

প্রসঙ্গত চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মের দায়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া গোলাম রাব্বানী নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে সোমবার নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। ওই স্ট্যাটাসে ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায় ও তার কারণে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষমা চান ডাকসুর এই জিএস।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া গোলাম রাব্বানীর স্ট্যাটাসটি হলো-

‘মমতাময়ী নেত্রী, আপনার মনে কষ্ট দিয়েছি, আমি অনুতপ্ত, ক্ষমাপ্রার্থী। প্রিয় অগ্রজ ও অনুজ, আপনাদের প্রত্যাশাপ্রাপ্তির পুরো মেইলবন্ধন ঘটাতে পারিনি বলে আপনাদের কাছেও ক্ষমাপ্রার্থী। মানুষমাত্রই ভুল হয়। আমিও ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নই। তবে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে আবেগ-ভালোবাসার এই প্রাণের সংগঠনের নীতি-আদর্শ পরিপন্থী ‘গর্হিত কোনো অপরাধ’ করিনি। আনিত অভিযোগের কতটা ষড়যন্ত্রমূলক আর অতিরঞ্জিত, সময় ঠিক বলে দেবে।

প্রাণপ্রিয় আপা, আপনি আদর্শিক পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবের সুযোগ্য তনায়া, ১৮ কোটি মানুষের আশার বাতিঘর। আপনার দিগন্ত বিস্তৃত স্নেহের আঁচল, এক কোণে যেন ঠাঁই পাই। আপনার ক্ষমা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বাকিটা জীবন চলতে চাই।’ এই স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে রাব্বানীর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিমু।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top